(বইটির pdf version download করুন এখানে)

বাংলাদেশে একাত্তরের ঘটনাবলি নিয়ে প্রচুর মিথ্যাচার হয়েছে। বিকৃত হয়েছে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক। লেখা হয়েছে অসত্যে ভরপুর অসংখ্য গ্রন্থ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক। নির্মিত হয়েছে বহু ছায়াছবি। এখনও সে বিকৃত ইতিহাস রচনার কাজ চলছে জোরেসোরে। এ পরিকল্পিত মিথ্যাচারের লক্ষ্য একটিই। আর তাহলো, দেশ-বিদেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে সত্যকে আড়াল করা। এবং যারা একাত্তরের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছে তাদের কৃত অপরাধগুলো লুকিয়ে নিজেদেরকে ফেরেশতাতুল্য রূপে জাহির করা। সে সাথে বিরোধী পক্ষকে দানব রূপে চিত্রিত করা। যারা দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করলো, গণতন্ত্রকে পাঠালো নির্বাসনে এবং মানুষকে পাঠালো ডাষ্টবিনের পাশে কুকুরের সাথে উচ্ছিষ্ঠ খোঁজের লড়াইয়ে তাদেরকে আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বলা হচ্ছে বস্তুত সে পরিকল্পনারই অংশ রূপে। এ মিথ্যাচারের আরেক বড় লক্ষ্য,একাত্তরে বাংলার মুসলামানদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী বিভক্তি সৃষ্টি হল, সেটিকে স্থায়ী রূপ দেয়া। বিভক্তিকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্যই পরিকল্পিত ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হচেছ। এ লক্ষ্যে একাত্তরে দালাল শব্দটির মত অতি বিষপূর্ণ শব্দের প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। যারাই একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদেরকেই দালাল বলে তীব্র ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এমন ঘৃণা ছড়ানোর একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। তাছিল পাকিস্তানপন্থিদের বিরুদ্ধেকৃত অপরাধগুলোকে জায়েজ করা। আর সে লক্ষ্যে সফলও হয়েছে।

ফলে তাদেরকে চাকুরিচ্যুৎ করা, তাদের ঘরবাড়ি ও দোকান-পাঠ দখল করা, হ্যাইজাক করে মুক্তিপণ আদায় করা, কারারুদ্ধ করা, নাগরিত্ব হরণ করা, এমন কি হত্যা করা ও হত্যার পর লাশগুলোকে কবর না দিয়ে পচিয়ে ফেলাও সমাজে গ্রহনযোগ্য হয়েছে। এটিই ছিল একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যবোধ। বৃটিশ শাসনামলে হাজার হাজার মানুষ উপনিবেশিক শাসকদের কর্মচারী রূপে স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীদের উপর অনেক জুলুম করেছেন। পুলিশের চাকুরি করতে গিয়ে অনেকে এদেশবাসীর উপর গুলিও চালিয়েছে। অনেকে বৃটিশের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছে। কিন্তু ৪৭ এর পর কি কাউকে দালাল বলা হয়েছে? তাদেরকে কি জেলে ঢুকানো হয়েছে? কারো কি নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সবাইকে বরং আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে একই বিভাগে বসানো হয়েছে। এটি যেমন পাকিস্তানে হয়েছে তেমনি ভারতেও হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্শাল পেত্যাঁ জার্মান নাৎসীদের সহায়তায় ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলে ভিশিতে এক সরকার গঠন করেছিলেন তাঁকেও বিজেতা জেনারেল দ্যাগল এ অপরাধে হত্যা করেননি। তার বিচার হয়েছিল। বিচারে তাকে জেল দেওয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনাদক্ষ হিসাবে তিনি প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ জন্য তাঁকে পরে মুক্তি দেয়া হয়। এবং মৃত্যুর পর তাঁকে বীরের মর্যাদা দেয়া হয়। -(ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, ১৯৯৩)। বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে ফজলুল কাদের চৌধুরি, আব্দুস সবুর খান,শাহ আজিজুর রহমান, নূরুল আমীন, ডাঃ আব্দুল মালেক (যিনি ৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন) এবং আরো অনেক পাকিস্তানপন্থি নেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পূর্ব বাংলার মুসলমানদের ভাগ্য পরিবর্তনে ১৯৪৭-এর পূর্বে ও পরে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অথচ তাদেরকে দালাল ও খুনি বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফজলুল কাদের চৌধুরি, আব্দুস সবুর খান, খাজা খয়ের উদ্দিন নাকি হুকুম দিয়ে মানুষ খুণ করিয়েছেন। ডাঃ আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। অথচ এ অভিযোগগুলির কোনটিই প্রমাণিত হয়নি। মুজিব আমলে নয়, পরেও নয়। অথচ আওয়ামী বাকশালী চক্র আজও এ নিরেট মিথ্যাগুলো জোরেশোরে রটনা করে নিছক ঘৃণা সৃষ্টির লক্ষ্যে। এমন ইতিহাস রচনার লক্ষ্য দেশের কল্যাণ নয়, সত্যকে তুলে ধরাও নয় বরং এখানে প্রাধান্য পেয়েছে কিছু বিশেষ ব্যক্তি ও বিশেষ দলের ইমেজকে বড় করে দেখানো। এবং বিরোধীদের যতটা সম্ভব কুৎসিত রূপে দেখানো। এভাবে দেশের মধ্যে সংঘাতের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা।

নানা প্রেক্ষাপটে প্রতিদেশেই বিভক্তি দেখা দেয়। সে বিভক্তি নিয়ে প্রকান্ড রক্তপাতও হয়। নবীজীর (সাঃ) আমলে আরবের মানুষ বিভক্ত হয়েছিল মুসলমান ও কাফের এদুটি শিবিরে। কিন্তু সে বিভক্তি বেশি দিন টেকেনি। সে বিভক্তি বিলুপ্ত না হলে মুসলমানগণ কি বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারতো? জার্মানরা বিভক্ত হয়েছিল নাজি ও নাজিবিরোধী এ দুই দলে। সে বিভক্তিও বেশীদিন টেকেনি। তা বিলুপ্ত না হলে জার্মানরা আজ ইউরোপের প্রধানতম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হতে পারতো? বিভক্তি দেখা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। সে বিভক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে আব্রাহাম লিংকনের আমলে উত্তর ও দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মাঝে প্রকান্ড গৃহযুদ্ধ হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ তাতে নিহতও হয়েছিল। কিন্তু সে বিভক্তি বেশী দিন টেকেনি। সেটি বিলুপ্ত না হলে দক্ষিণ আমেরিকার মত উত্তর আমেরিকাতেও উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়ার মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহু রাষ্ট্রের জন্ম হত। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ যেভাবে এক নাম্বার বিশ্বশক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করছে তা কি তখন সম্ভব হত? পারতো কি পৃথিবী জুড়ে প্রভাব সৃষ্টি করতে? আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মসম্মান ও সভ্যতার নির্মাণ ঘটে তো একতার পথ ধরেই। বিভক্তির মধ্য দিয়ে আসে আত্মহনন, আত্মগ্লানি ও চরম অপমান। বাংলাদেশ আজ সে বিভক্তির পথ ধরেই অগ্রসর হচ্ছে। একটি দেশের জন্য এর চেয়ে বড় আত্মঘাত আর কি হতে পারে? একতার গুরুত্ব শুধু বিবেকবান মানুষই নয়, পশুপাখিও বোঝে। তাই তারাও দল বেঁধে চলে। একতা গড়া ইসলামে ফরয এবং বিভক্তি গড়ার প্রতিটি প্রচেষ্টাই হল হারাম। বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একতার পথে চলা ও না-চলার বিষয়টি ব্যক্তির খেয়াল খুশির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। অলংঘনীয় নির্দেশ এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। পবিত্র কোরআনে তিনি সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন, ‌‌

“ওয়া তাছিমু বিহাব্‌লিল্লাহে জামিয়াঁও ওয়ালাতাফাররাকু”‌‌‌‌‌’‌‌‌

অর্থ: এবং তোমরা আল্লাহর রশি (আল্লাহর দ্বীন তথা পবিত্র কোরআন বা ইসলামকে) আঁকড়ে ধর এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়োনা..।-(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা শুধু যে একতাবদ্ধ হতে বলেছেন তা নয়, কিসের ভিত্তিতে একতা গড়তে হবে সেটিও বলে দিয়েছেন। সে একতা ভাষা, ভূগোল ও বর্ণভিত্তিক হবে না, হবে আল্লাহর রশি তথা ইসলাম বা কোরআন ভিত্তিক। মুসলমানদেরকে বলা হয়েছে কোরআনকে বা ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে, ভাষা, বর্ণ ও ভুগোলকে নয়। আল্লাহতা।য়ালা যেমন একতাবদ্ধ হতে বলেছেন তেমনি পরস্পরে বিভক্ত না হওয়ার বিরুদ্ধেও সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিটি হুকুমই তো অলঙ্ঘনীয়। ফলে একতা প্রতিষ্ঠার প্রতিটি প্রয়াস যেমন আল্লাহর আনুগত্য তথা ইবাদত, তেমনি বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার প্রতিটি প্রয়াসই হলো বিদ্রোহ। দেশের রাজা বা বিচারকের বিরুদ্ধে যে কোন বিদ্রোহ শাস্তি অনিবার্য করে তোলে। মহান আল্লাহর এ হুকুমের অবাধ্যতা কি রহমত বয়ে আনে? এটি তো গুরুতর বিদ্রোহ। এমন বিদ্রোহ যে আযাব ডেকে আনে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? বাংলাদেশে সে অবাধ্যতা চলছে নানা ভাবে।

আল্লাহর অবাধ্যতা শুধু এ নয় যে জনগণের অর্থে ও সমর্থনে দেশে সূদী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বা রাষ্ট্রীয় অর্থে বেশ্যাবৃত্তি বা জ্বিনা পাহারাদারি পাচ্ছে বা আইন-আদালত থেকে আল্লাহতায়ালার আইনকে সরিয়ে ব্রিটিশ ফৌজদারি বিধি (পেনাল কোড) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বরং আল্লাহর বিরদ্ধে বড় বিদ্রোহ ঘটেছে ভাষা,বর্ণ ও পৃথক ভূগোলের নামে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি গড়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানেরা ভাষা ও বর্ণকে নয়, ইসলামকে আঁকড়ে ধরেছিল। বাঙ্গালী, বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি, গুজরাটি এরূপ নানা ভাষার মুসলমানগণ ভাষার পরিচয় নিয়ে নয়, ঈমানী পরিচয় নিয়ে একাতাবদ্ধ হয়েছিল। তারা সেদিন ভুলে গিয়েছিল তাদের ধর্মীয় ফেরকা ও মাজহাবী বিরোধ। উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসে এটি অনন্য। পবিত্র কোরআনে মুসলমানদের বলা হযেছে হিজবুল্লাহ বা আল্লাহর দল। এটি কি ভাবা যায়,আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের বাহিনীতে অনৈক্য চাইবেন? এবং সেটি ভাষা, বর্ণ বা ভৌগলিক স্বার্থের নামে? মুসলিম উম্মাহর একতা ও বিজয়ের চেয়ে এগুলি কি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? আল্লাহতায়ালা তাঁর বাহিনীতে একতার যে কোন উদ্যোগে যে খুশি হবেন সেটিই তো স্বাভাবিক। উমহাদেশের মুসলমানদের সে একতা আল্লাহতায়ালাকে এতই খুশি করেছিল যে তাদের প্রতি তাঁর বিশাল রহমত জুটেছিল। ফলে বিজয়ও এসেছিল। এ রহমতের কারণেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা করতে কোন যুদ্ধ লড়তে হয়নি। অস্ত্র না ধরেই বিশাল শত্রুপক্ষকে সেদিন তারা পরাজিত করতে পেরেছিল।

ইসলামের শত্রুপক্ষের কাছে তাদের ১৯৪৭ এর পরাজয় যেমন কাম্য ছিল না, তেমনি সহনীয়ও ছিল না। তারা তো মুসলিম রাষ্ট্রগুলিকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করতে ব্যস্ত। ফলে তাদের চোখের সামনে পাকিস্তানের ন্যায় বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটবে সেটি অসহ্য ছিল। ফলে জন্ম থেকেই পাকিস্তান ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের টার্গেটে পারিণত হয়। আরবদেরকে এরাই বিশেরও বেশী টুকরায় বিভক্ত রেখেছে। নব্যসৃষ্ট এসব দেশের প্রতিটিতে এমন সব তাঁবেদারকে তারা বসিয়েছে যাদের কাছে এ বিভক্ত ভূগোল ভেঙ্গে এক অখন্ড রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কোন প্রয়াসই হলো চরম ফৌজদারি অপরাধ। ১৪ কোটি মানুষের বাংলাদেশও একই কারণে শত্রুশক্তির অন্যতম টার্গেট। বিশেষ করে ভারতের। ভারতের পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের সৃষ্টিকে তারা মেনে নেবে না,তাদের এ ঘোষণা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহর দেওয়া শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করুক সেটিও তারা মানতে রাজী নয়। তারা আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হোক ও তার আইনের অনুসারি হোক এতেও তাদের আপত্তি। ইসলামের এ অতি সনাতন রূপকে তারা মৌলবাদ বলে। এজন্যই বাংলাদেশের অখন্ড ভূগোল যেমন টার্গেট তেমনি টার্গেট হলো একতাবদ্ধ জনগণও। যে কারণে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাদের প্রচন্ড আগ্রহ ছিল তেমনি আগ্রহ বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করায়ও। এজন্যই ১৯৭১ এ বিজয়ের পর পরই শুরু হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক লুণ্ঠন প্রক্রিয়া। তাদের হাতে পাকিস্তান আর্মির ফেলে যাওয়া অস্ত্রসামগ্রীই শুধু লুট হয়নি। লুট হয়েছে অফিস-আদালত ও কলকারখানার বহু হাজার কোটি টাকার মালামাল। তাদের কাছে পাকিস্তান ভাঙ্গাটি ছিল প্রথম পর্ব মাত্র, শেষ পর্ব নয়। ভূগোল ভাঙ্গার লক্ষ্যে ভারতীয় সরকার ও পুলিশের সামনে পশ্চিম বাংলার মাটিতে প্রতিপালিত হচ্ছে “স্বাধীন বঙ্গভূমি” প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এসব প্রাক্তন বৃহত্তর জেলাগুলোকে বাংলাদেশ থেকে পৃথক করে এরা স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র গড়তে চায়। এদের নেতা চিত্তরঞ্জন সুতার এক কালে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য ছিলেন। জনগণকে বিভক্ত রাখার স্বার্থে এদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিভেদের সূত্রগুলো খুঁজে বের করা। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী হাতিয়ার রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে একাত্তরের বিবাদ। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ চাইলে কি হবে,একাত্তরের ঘটে যাওয়া বিবাদ ও বিভক্তির সে দহন বেদনা থেকে বাংলাদেশের জনগণের মূক্তি নেই। বরং সে বিভক্তিকে আরো বিষাক্ত করে তারা আরেকটি গৃহযুদ্ধ শুরু করতে চায়। তাই স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্ক শেষ হবার নয়। বরং এ বিভেদ স্থায়ী রাখতে ভারত ও তাঁর তাবেদার পক্ষ অবিরাম পেট্রোল ঢালতেই থাকবে। ভারতের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র পক্ষ। ইসলামের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এরা সবাই মিলে গড়ে তুলেছে গ্লোবাল কোয়ালিশন। ইসলামকে এরা সবাই প্রতিপক্ষ শক্তি রূপে দেখে। বাংলাদেশের ১৪ কোটি মুসলমান যে মুসলিম উম্মাহর অংশ সে বিষয়টি বহু মুসলিম ভুলে গেলেও তারা ভূলতে রাজি নয়। ফলে যে লক্ষ্যে আরবদের বিভক্ত রেখেছে সেই একই লক্ষ্যে বাংলাদেশের মুসলমানদেরকেও তারা বিভক্ত রাখতে চায়। সে বিভক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যেই বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের বিণিয়োগ শত শত কোটি টাকা। বিপুল বিণিয়োগে নেমেছে ভারত সরকারও। তবে শিল্পখাতে নয়। অর্থনীতির অন্য খাতেও নয়। বিণিয়োগ হচ্ছে দেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী, রাজননৈতিক নেতা-কর্মী এবং এনজিও পরিচালকদের উপর।

স্বাধীনতার রক্ষা প্রতিদেশের জন্যই অতি ব্যয়বহুল। পাকিস্তানের মত বহুদেশের জাতীয় বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ খরচ হয়ে যায় প্রতিরক্ষা খাতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তো সে ব্যয়ভারে ভেঙ্গেই গেল। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ধনি দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এ দেশটি সে ব্যয়ভার কমাতে পার্টনার খুঁজছে। যে কোন ক্ষুদ্র দেশের পক্ষে এ ব্যয়ভার বহন অসম্ভব। মাথাপিছু আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও সে সামর্থ কুয়েত,কাতার,আমিরাত বা সৌদিআরবের নেই। অবশ্য স্বাধীন থাকাটা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি মর্যাদাপূর্ণও। স্বাধীন ভাবে বাঁচার আনন্দটাই আলাদা। এজন্যই মর্যাদাশীল জাতি লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ দিয়ে হলেও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। আর স্বাধীন থাকার জন্য শুধু একখানি পতাকা, একটুকরা ভূমি, একজন প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হলেই চলে না। স্বাধীনতা রক্ষার সামর্থও থাকা চাই। ১৯৪৭ এ বাংলার মুসলমানদের পাকিস্তানভূক্ত হওয়ার মূল গরজ তো ছিল এটিই। সে কালের বাংলার মুসলিম নেতাগণ যে কতটা বিচক্ষণ ও দুরদৃষ্টির অধিকারি ছিলেন এ হল তার প্রমাণ। তাদের লক্ষ্য ছিল প্রকৃত স্বাধীন হওয়া, সিকিম, ভুটান বা ২৫ বছরের দাসচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ হওয়া নয়, যেমনটি শেখ মুজিব করেছিলেন। ২৫ বছর চুক্তির মধ্য দিয়ে মুজিব ভারতকে যে কোন সময় বাংলাদেশে সৈন্য অনুপ্রবেশসহ সামরিক হস্তক্ষেপের অধিকার দিয়েছিল। স্বাধীনতার হেফাজতে ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তান দুই-দুইটি যুদ্ধ লড়েছে। আণবিক শক্তিধারি এ দেশটি এখনও তেমন লড়াইয়ে প্রস্তুত। কিন্তু সে সামর্থ কি বাংলাদেশের আছে? আর না থাকলে স্বাধীনতাই বা থাকে কতটুকু? স্বাধীনতার সুরক্ষায় অক্ষমতাই কি পরাধীনতা নয়? স্বাধীনতা রক্ষায় শুধু লোকবলই যথার্থ নয়, অর্থবল, অস্ত্রবল এবং ভূগোলের বলও চাই। আজকের ইউরোপের দেশগুলো একতাবদ্ধ ইউরোপীয় যুক্তরাষ্ট্রের বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্ম দিচ্ছে নিজেদের সে সীমিত সামর্থের কথা ভেবেই।

(বইটির pdf version download করুন এখানে)

  1. Assalamu Alaikum
    It is very beutiful work. I am half way through of my reading the history of partition of 1971. it is quite fascinatng.

  2. Assalamu alaikum wa rahmatullahi wa barakatu, I have read your article regarding the history of 1971 and I strongly agree with you. It takes lot of courage to talk about the truth when unfortunately the majority in Bangladesh tend to accept the fake history without any second thought. There even exists very factual evidence which people seem to overlook. May Allah SWT reward you for your courage and honesty to voice out the truth! The so-called Islamic party in Bangladesh should read your articles with sincerity and correct their strategy of self-deception and zero liability. If they claim to be Muslims, they must follow the basic principals of Islam or otherwise I can hardly see any difference between a secular, nationalist and a Muslim political activist. Please do keep up the good work and write more for the Ummah as we Muslims need people like you to educate and spread the real message of Islam. Wassalam

  3. Mr. Kamal, I have read ur “71 er atto ghater itihas”. Thank you for all ur patient to write this article and i appreciate for ur shrewd intelligence. I have liked that u have some humanity that just work for muslims. As i have go through ur article u just have described a part of history with lot of untruth information alike u love only a part of human being (muslim). Look, now this world technique of war has change. Now war is not with the weapon rather with brain wash as the soviet union broke (not the reason u mentioned at ur article). Am sure you just trying this technique. I dont support to kill a man (whether he is muslim or any other religion) cause that is not humanity. But i hope you will use ur intelligence for the well being of all human being. But if its the question of your bread and butter then for the sake of humanity I will not tell you anything. Take Care and try to do something else for ur bread and butter.

    • Firoz Mahboob Kamal

      Dear Mr. Dey, I appreciate that you have made your personal views known to me. You have raised some allegations against me. I must answer to those allegations point by point. Your first point: You have written that I have told “lot of untruth” in my article. But surprisingly you didn’t point even a single one from the text of my article. So how can I understand that your point is valid and truthful? Neither have you given me an opportunity to answer to such an allegation. You made just a flying comment without any proof. In future when you say something you must provide evidence, then you can deserve an answer. Second point: You made a comment that “I love only a part of human being (Muslim)”. How can you say that? As a Muslim, one should love not only humans but also plants and other creatures. I believe in that. The focus of my article was not about this issue. It was about history of 1971 from an Islamic perspective. So far, the history of 1971 was mostly written from secular, Indian or Hindu perspective. Little is written from Islamic perspective. I have tried to do that. After all, we do not look at an event with the same mindset. Some people think sex out of marriage is great love, but Muslims view it a crime only to be punished by stoning to death. Same thing happened in 1971. Some people celebrated it as a great victory, but others mourned it as a great defeat. The same thing happened in 1757 when Bengal fell to colonial power. Third point: About the suggestion you made “I hope you will use ur intelligence for the well being of all human being.” Of course I should do it. It is life-long mission of a true Muslim and that can be done in the best way by following Islam in all areas of life, not only in formal rituals in mosques. For doing any good deed, one doesn”t need to forget and ignore Islam and Muslims plights. Lastly, about your concluding suggestion: “Take care and try to do something else for ur bread and butter.”

      I understand from your name that you are a non-Muslim. So it is not surprising to me that how ignorant you are about a Muslim”s faith. You think I am writing these articles for my bread and butter. How wrong you are! Almighty Allah has given me enough other skills to earn enough of that. Your ignorance has failed you to understand that Muslims do not survive and do things for mere bread and butter. Their prime purpose is to serve the cause of Islam. For that, they not only sacrifice their time, money, energy, intelligence and but also life. No government or agency need to pay for that. All are self-financed and self-employed. Look at your surroundings you will find enormous evidence to that. Unlike all other religions, Islam has a special vocabulary for such acts and for such people. These are Jihad and Shahadat (martyrdom). I understand that you are very much unhappy to see such engagement of true Muslims. My article is only a part of that.

  4. আমার মনে হয় আপনি পাকিস্তানি  অথবা রাজাকার জাতিও কিছু। আপনি কি পাকিস্তানের  হয়ে অথবা জংগীদের কিছু করেন। সরাসরি একটি দেশকে অস্বীকার করছে। শুধু শুধু কেন লেখার মাধ্যমে খারাপ বারতা প্রচার করেন। যদি বাঙ্গালী হয়ে থাকেন তবে ভালহয়ে যান, পাকিস্তানের দালালি শেষ করুন। ভারতের জন্যই আমরা বাঙ্গালী। আপনি কি ভুলে গেছেন ভাষা আন্দলন, আর এখন তো লিখেযাচ্ছেন বাংলাতেই। বাংলা শুধু মুসলিমদের নয় সবার। হয় বাংলার পক্ষে বলুন, না হয় আপনার প্রভু সেই পাকিস্তানে চিলে যান। 

  5. I have travelled many parts of this planet and met peoples from different countries. I have come across many Pakistanis whos view about Bangladesh or Bangladeshis are poor and in many extant ignorant. They do not like this particular nation for some funny reason that I can”t say. When I was living in India (my country) my idea was that Pakistanis and Bangladeshi are friendly and have good relations. Bangladeshis likes them but Pakistanis don’t. In fact Pakistanis feel more for Indians then Bangladeshis. I don”t understand why Bangladeshis have to go after their big brother Pakistanis who don”t even care about them. Surprising that after so many years of 71 war you people still have sympathy for the country which is officially or unofficially labelled as a terrorist nation and are melting. I don”t know the history of 71 war in details but why speak for a country that has nothing to offer to the world then hatred to the non-muslim world. Is it because you Bangladeshis are mainly muslim and you have to support any muslim nation, be it a terrorist nation. I do not know much about 71 war and the reason behind it. Are you people better off being Bangladesh or were you better off as East Pakistan?

    • You say you have visited many parts of the world and come across many Pakistanis who would rather like Indians then Bangladeshis. Let me ask you which planet you are on? India is the Enemy of Islam & Pakistan since 14th Aug 1947.

      • Irrespective of the bitter events in 71, Pakistanis have great regard for BD. A common Pakistani believes that their leaders and India betrayed them that resulted in the tragic events of 1971.

    • Mr. Ghosh! Better come to Pakistan and then conduct a survey about popularity of India than BD. Everything will become crystal clear to you. The love for the neighbor countries India has got, all South Asian nations are aware of it. Nepal and Sri Lanka has bitterly experienced it.Regarding support of Bengali Muslim for Muslims anywhere in the world, if you think it unlawful, don”t you support Hindus anywhere in the world if they are suppressed? And please be careful for calling Pakistanis as terrorist a nation. People here too consider India as a terrorist state. Don”t forget the killings of Muslims by Hindus in “Mali Gayoun, Gujrat Roits, Ajmer Shareef Bomb Blast and Samjhota Express Killings” by Hindu Terrorists. Why did your countrymen kill Hemant Kurkurray? Because he was exposing Hindu Terrorism?

  6. আসসালামু আলাইকুম। অত্যন্ত ধৈর্য্য ধরে আপনার প্রবন্ধটি পড়লাম। খুব ভাল লাগল। নবীন প্রজন্মদের জন্য বিশেষ উপকারী আমরা আজ যে বানোয়াট, মিথ্যা ইতিহাস জেনে আসছি- তার শেষ হওয়াটা দরকার। এই লেখাটি যদি আমি লিখতাম এবং এর জন্য যদি কেউ আমাকে “রাজাকার” বলে গালি দিত- আমি তা প্রকৃত অর্জন মনে করে মুকুট হিসেবেই গ্রহণ করতাম। সত্যিই আপনি একজন ইসলামী রাজাকার (ইসলামী স্বেচ্ছাসেবক)। আল্লাহ আপনাকে হায়াত দান করুন, কবুল করুন, আমিন।

  7. Just finished reading the article on the history of 71. I must say it is an excellent analysis and I was looking for such article for a long time. I hope it will knock on the head of so-called Islamic parties in BD as they are full of cowardice and now speaking on same tone as the secular and nationalist perpetrators of the 71 partition. Please add more articles on this topic.

  8. I can’t understand those people who loves this Bangladesh but never try to know the history of this country with some research….but they must like to know the history listening from their leader although the leader is also like them….funny…..they like to say Razakar to any one islamic but they do not know enough about razakars.

  9. Jader Banglar proti darad nei, bangalir proti shroddha nei, Jara Bangladesher Swadinata eneche tader proti Sanman dekhay na, Tader Janma nie kabi ki bolbe? Was 1971 a Suicide for Bangali? Was 71 a Myth? If not, So How dare Firoz Mahboob Kamal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>